কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করার আহ্বান এপিএ-এর

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি এই শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এশিয়ান পার্লামেন্টারি অ্যাসেম্বলি-এপিএ।

মঙ্গলবার তুরস্কের আনতালিয়ায় এপিএ-এর ত্রয়োদশ প্লেনারি অধিবেশনের ঘোষণায় এ আহ্বান জানানো হয়।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, “১৫ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং এই শরণার্থীদের নির্বিঘ্ন, সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে এপিএ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজার, টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছেন।

মানবিক কারণে এতদিন ধরে এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এলেও বাংলাদেশ শুরু থেকেই এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে, টেকসই ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার জন্য জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের তৎকালীন সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও করে।

এরপর ২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।

এর মধ্যে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে তার দলের অধিকাংশ নেতাকে গ্রেপ্তার করলে মিয়ানমারের সঙ্কট ঘনীভূত হয়। এর পর থেকে গণতন্ত্রপন্থি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর আন্দোলন এবং সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে সেখানে।

গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করার পর মিয়ানমারে সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘নিবর্তনমূলক’ কর্মকাণ্ড বন্ধেরও আহ্বান জানানো হয়েছে এপিএ।

ঘোষণাপত্রে এপিএ বলছে, “কেবল রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নয়, মিয়ানমারে সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিষয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং মিয়ানমারে সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দ্রুত অবসান চাইছি।

“নির্যাতিতদের জন্য সুবিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ঘটনায় সব ধরনের বিচারহীনতার বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

বাংলাদেশের তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রোববার থেকে মঙ্গলবার তুরস্কের আনতালিয়া শহরে এপিএ-র নির্বাহী পরিষদ ও ত্রয়োদশ প্লেনারি অধিবেশনে অংশ নেয়।

সংসদ সদস্য মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, বেগম সুলতানা নাদিরা, বেগম মনিরা সুলতানা এবং সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আমিনুল ইসলাম ছিলেন এই প্রতিনিধি দলে।

পাঠকের মতামত: